ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

ইসলামপুরে ছাগল বিপত্তি ও ধোলাই !

বিশেষ প্রতিবেদক ::

আসন্ন কোরবানীর ঈদ উদযাপন উপলক্ষে ছাগল সংক্রান্ত বিপত্তিতে পড়েছে কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর ইউনিয়নের এক ব্যক্তি।

ছাগল নিয়ে মারাত্মক সাংসারিক ঝামেলায় পড়ে দুই বউয়ের সম্মিলিত ধোলাই খেয়ে শেষ পর্যন্ত পালিয়ে বেঁচেছে দুই বিয়ে করা আইবুড়ো বর। আর এতে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে প্রবল হাস্যরস।

আলোচিত এ ছাগল বিপত্তির শিকার গিয়াস উদ্দীন বাবুল (৫৫) ইসলামপুর ইউনিয়নের উত্তর খাঁন ঘোনা গ্রামের বাসিন্দা ও মৃত ফরিদ মেম্বারের ছেলে।  প্রত্যক্ষদর্শী মৌলভী আমিন জানান, বাবুল কয়েকবছর আগে স্বামী পরিত্যক্তা স্থানীয় এক মহিলাকে গোপনে (২য়) বিয়ে করে।

কিন্তু প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও বিয়েযোগ্য ছেলে-মেয়েদের ভয়ে ২য় স্ত্রীকে ঘরে না এনে বাড়ির অদুরে ভাড়া বাসায় রাখে। এর কিছুদিন পর তার ২য় বিয়ের কথা ফাঁস হয়ে যায়। দুই বিয়ে সংক্রান্ত পারিবারিক কলহের জেরে কিছুদিন আগে ২য় স্ত্রীর বাসায় যাতায়াতের ব্যাপারে বাবুলের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রথম স্ত্রী ও সন্তানরা।

এতে বাবুল চরম বেকায়দায় পড়ে। এদিকে স্বামীসঙ্গ ও ভরন-পোষন না পেয়ে ২য় স্ত্রী বাবুলের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা করার হুমকি দেয়।

একদিকে প্রথম পক্ষের স্ত্রী-পুত্র-কন্যার নিষেধাজ্ঞা অন্যদিকে ২য় স্ত্রীর মামলার হুমকিতে উভয় সংকটে পড়ে বেচারা বাবুল।

স্হানীয় মোস্তফা মাঝি জানান, দীর্ঘদিন বেকার থাকা বাবুল দুই সংসারের খরচ চালাতে না পেরে প্রচুর ধার-কর্জ করে। ইসলামপুর বাজার, সুইচ গেইট বাজার, নাপিতখালী বটতলী ষ্টেশন ও ঈদগাঁও বাজারের বিভিন্ন দোকান থেকে বাকীতে চাল-ডাল-তরকারী ও নিত্যপন্য নিয়ে আর শোধ করতে পারেনি সে। একপর্যায়ে স্হানীয় পাওনাদার ও দোকানদাররা বাকী টাকার জন্য চাপ দিলে বাবুল এলাকা ছেড়ে কক্সবাজার চলে যায় ও সেখানে একটি ভবনে দারোয়ানের চাকরী নেয়। কিন্তু এরমধ্যে ২য় স্ত্রী বাবুলের কর্মস্হলে গিয়ে খোরপোষ চেয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করে ও মামলার হুমকি দেয়।

অবশেষে মামলা থেকে বাঁচতে ২য় স্ত্রীর সাথে গোপন সমঝোতা বৈঠকে বসে ২য় স্ত্রীকে কোরবানীর তেল মসল্লার খরচ বাবদ ৩ হাজার টাকা দেয়ার অঙ্গীকার করে।

কিন্তু অনেক দেন দরবার করেও টাকা যোগাড় করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত গৃহপালিত একমাত্র ছাগলটি প্রথম স্ত্রীর অজান্তে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় বাবুল। সে মোতাবেক রবিবার সকালে গোপনে এলাকায় আসে ও মাঠে চরা অবস্হায়

ছাগলটি নিয়ে রওয়ানা দেয় সে।

কিন্তু ছাগল নিয়ে যাওয়ার খবরটি ইতিমধ্যেই প্রথম স্ত্রী ও সন্তানরা জেনে যায় ও লাঠি-সোটা নিয়ে পথ আটকায় বাবুলের। এদিকে ছাগল বিক্রিতে প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের বাধা দেয়ার খবর শুনে রণ-রঙ্গিনী ভাব নিয়ে তেড়ে আসে ২য় স্ত্রী।

ছাগল বিক্রি ও না বিক্রি সংক্রান্ত বাদানুবাদ এবং এ্যাকশন রি-এ্যাকশনের একপর্যায়ে দুই স্ত্রীই ছাগলের দড়ি ধরে টানাটানি শুরু করে।

এতে কিংকর্তব্যবিমুঢ় বাবুল বিবদমান যুদ্ধংদেহী দুই স্ত্রীকে নির্বৃত্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দুই স্ত্রী মিলে এবার একযোগে বাবুলকে এলাপাতাড়ি ধোলাই শুরু করে।

লাঠি-সোটা ও ঝাঁটা সহযোগে দুই স্ত্রীর সম্মিলিত ননস্টপ মারের মুখে প্রথমে হতবাক হয়ে পড়লেও পরক্ষনে কোন রকমে মুক্ত হয়ে ছাগল ফেলেই প্রাণ নিয়ে দৌড় দেয় বাবুল।

ছাগল বেচতে গিয়ে দুই স্ত্রীর বেধড়ক মার ও শেষে স্বামীর পলায়নের এ ঘটনায় এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে প্রবল হাস্যরস।

স্থানীয় আবু তালেব জানান, গিয়াস উদ্দিন বাবুল এর আগেও ২য় স্ত্রীর বাপের বাড়িতে মারধরের শিকার হয়েছিল। উপরোক্ত ছাগল বিপত্তি ও ধোলাইয়ের ব্যাপারে বাবুল বলেন, এটা পারিবারিক ভুল বুঝা বুঝি। কিন্তু ছাগলটি এখন কোথায় জিজ্ঞেস করলে, ‘ধ্যাৎ মিয়া’ বলে মোবাইল বন্ধ করে দেন।

পাঠকের মতামত: